
বাংলা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী 2025: শুক্রবার, ৯ মে – এক কবির জন্মদিনে বাঙালির শ্রদ্ধার্ঘ্য
ভূমিকা
প্রতিবছর ২৫শে বৈশাখ (গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এই বছর ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার) দিনটি বাঙালির সংস্কৃতি, সাহিত্য ও সৃজনশীলতার ইতিহাসে এক গৌরবময় দিন। এ দিনটি নোবেলজয়ী কবি, লেখক, সঙ্গীতকার, চিত্রশিল্পী ও দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন, যা সারা বাংলায় ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাঙালিদের মধ্যে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে পালিত হয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (৭ মে ১৮৬১ – ৭ আগস্ট ১৯৪১) বাংলা সাহিত্যকে নতুন দিগন্তে পৌঁছে দিয়েছেন, ভারতবর্ষের সাংস্কৃতিক জগতকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত করেছেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: এক অনন্য বহুমুখী প্রতিভা
রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একাধারে কবি, নাট্যকার, ছোটগল্পকার, প্রবন্ধকার, সঙ্গীতজ্ঞ, দার্শনিক এবং চিত্রশিল্পী। তিনি প্রায় ২২৩০টিরও বেশি গান রচনা করেছেন, যেগুলি “রবীন্দ্রসঙ্গীত” নামে খ্যাত। তাঁর সৃষ্ট সাহিত্য ভারতবর্ষের জাতীয় চেতনার সঙ্গে মিশে গিয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত — যথাক্রমে “জন গণ মন” এবং “আমার সোনার বাংলা” তাঁরই রচনা।
Read This: Rabindranath Tagore Birth Anniversary: Date, Life, Legacy
রবীন্দ্রজয়ন্তীর তাৎপর্য
সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে
রবীন্দ্রজয়ন্তী শুধু একজন কবির জন্মদিন নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক উৎসব। এ দিনে বাংলা সাহিত্যের পাঠ, রবীন্দ্রসঙ্গীত, কবিতাপাঠ, আবৃত্তি, নাট্য পরিবেশনা, চিত্রকলা এবং নৃত্যনাট্যের মাধ্যমে তাঁর অবদানকে স্মরণ করা হয়।
বিশ্বভারতী (শান্তিনিকেতন), রবীন্দ্রসদন (কলকাতা), জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি সহ সারা বিশ্বে বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে দিনটি এক বিশেষ আবেগের সঙ্গে উদযাপিত হয়।
আধুনিক প্রেক্ষাপটে রবীন্দ্রনাথ
বর্তমান প্রযুক্তি-নির্ভর, দ্রুতগতির যুগেও রবীন্দ্রনাথ প্রাসঙ্গিক। তাঁর লেখায় আজও আমরা খুঁজে পাই মানবিকতা, সামাজিক সুবিচার, নারীর মর্যাদা, প্রকৃতি প্রেম এবং আত্মবিকাশের আহ্বান।
“ছোটো করে দেখো না মানুষকে”— এই বার্তাটি আজও প্রতিটি প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে।
২০২৫ সালের রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপনের রূপ
২০২৫ সালের রবীন্দ্রজয়ন্তী ৯ মে, শুক্রবারে পড়ছে। এই বছরেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় একাধিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটি পালন করবে।
সম্ভাব্য কর্মসূচি:
- পুষ্পার্ঘ্য ও মাল্যদান রবীন্দ্র মূর্তিতে
- আবৃত্তি ও রবীন্দ্রসঙ্গীতের আসর
- ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কবিতা, চিত্রাঙ্কন ও নৃত্য প্রতিযোগিতা
- বিশেষ বক্তৃতা ও আলোচনা সভা যেখানে রবীন্দ্রচিন্তা ও আধুনিক সমাজের উপর তাঁর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হবে
- সোশ্যাল মিডিয়া ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে লাইভ অনুষ্ঠান সম্প্রচার
বিশ্বমঞ্চে রবীন্দ্রজয়ন্তী
বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং দুবাই সহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী বাঙালিরা কবিগুরুর জন্মদিন উপলক্ষে স্থানীয় কনস্যুলেট, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আয়োজন করেন সাহিত্য সন্ধ্যা ও রবীন্দ্রসঙ্গীতানুষ্ঠান।
রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি স্মরণীয় উক্তি
“সবচেয়ে বড় শিক্ষা, আমি নিজে কিছু না জেনেও অপরকে শেখাতে পারি না।”
“বিশ্বাস এমন একটি পক্ষীর মতো, যার ডানা থাকে আত্মার ভিতরে।”
“যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে।”
Gregorian vs. Bengali Calendar: Why Rabindra Jayanti 2025 Falls on 9th May
According to the Gregorian calendar, Rabindranath Tagore’s birth anniversary is observed on 7th May every year, as he was born on this date in 1861. However, as per the Bengali traditional calendar (Panjika), his birth took place on 25th Boishakh, which in 2025 falls on 9th May. Therefore, Bengalis across the world primarily celebrate Rabindra Jayanti on 9th May in 2025, following the Panjika, with cultural events, songs, recitations, and tributes dedicated to the poet.
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী প্রতি বছর ৭ই মে পালিত হয়, কারণ তিনি ১৮৬১ সালে এই তারিখে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তবে, বাঙালি ঐতিহ্যবাহী পঞ্জিকা (পঞ্জিকা) অনুসারে, তাঁর জন্ম হয়েছিল ২৫শে বৈশাখ, যা ২০২৫ সালে ৯ই মে পড়ে। তাই, বিশ্বজুড়ে বাঙালিরা মূলত ২০২৫ সালের ৯ই মে পঞ্জিকার পর রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপন করে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গান, আবৃত্তি এবং কবিকে উৎসর্গীকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলির মাধ্যমে।
উপসংহার
রবীন্দ্রজয়ন্তী মানে শুধু একটি দিন নয়, এটি একটি চেতনাধারা, যা বাঙালির মনের গভীরে বয়ে চলে। ২০২৫ সালের ৯ মে, শুক্রবার আমাদের উচিত নতুন করে কবিগুরুর ভাবনাগুলি আত্মস্থ করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে তা ছড়িয়ে দেওয়া।
এই দিনে আমরা যেন শুধু উৎসবের আনন্দে মেতে না উঠে, বরং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা, দর্শন ও মানবিক মূল্যবোধকে হৃদয়ে ধারণ করি — এটাই হবে তাঁর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধার্ঘ্য।